করোসল: ক্যানসার প্রতিরোধে বিস্ময়কর ঔষধি ফল
ক্যানসার রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ওঠার চাবিকাঠি এখনও অধরা। ক্যানসারের আতঙ্কও সহজেই জাঁকিয়ে বসে। ক্যানসার কোনও নির্দিষ্ট কারণে হয় না। চিকিৎসকদের ভাষায় এটি একটি ‘মাল্টি ফ্যাকেটেরিয়াল ডিজিজ’। মূলত তেল-মশলাদার খাবার, অতিরিক্ত বাইরের খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও ময়দা খেলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। শরীরের কোনও কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিই ক্যানসারের অন্যতম কারণ। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে কার্যকরী বিস্ময়কর করোসল গাছ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
করোসল ফল কেমোথেরাপির চেয়ে ১০ হাজার গুণ শক্তিশালী। অথচ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। করোসল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানোনা মিউরিকাটা। করোসল অ্যানোনা মিউরিকাটা গোত্রের একটি ফল যা অনেক ক্ষেত্রেই ক্যামোথেরাপির কাজ করে থাকে। ক্যানসার প্রতিষেধক হিসেবে এ ফলের পক্ষে বিশেষজ্ঞদের বহুবিদ মতামত পাওয়া যায়। অনেক দেশেই এ ফলটি ক্যানসার প্রতিরোধক ফল হিসেবে পরিচিত। শুধু ফলই নয়, এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রস্টেটের সমস্যায়ও নিরাময় হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ফলের এতটাই গুণ, এই ফল খেলে ক্যানসার রোগীর থেরাপির প্রয়োজন হয় না। শরীরও চাঙ্গা থাকে, দুর্বল ভাব আসে না। মূলত, আমাজন নদীর উপত্যকা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে করোসল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়া চায়না, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল এইসব দেশেও করোসল ফল জন্মায়। বাংলাদেশে এই ফলের চাষ শুরু হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত করোসল ফলের গাছ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। করোসল ফল চাষ কৃষকদের আয়ের এই নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
করোসল গাছে রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্টোজেনিন নামে এক ধরনের যৌগ। এই যৌগ ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়, যা কেমোথেরাপি করে। ফলে ক্যানসার কোষ আর বাড়তে পারে না। এছাড়া নিয়মিত এই ফল খেতে পারলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়। রক্তকে শোধিত করতেও এই ফলের গুণ অনস্বীকার্য।
করোসল ফলটি গ্রাভিওলা, সাওয়ারসপ, গুয়ানাবা, গুয়ানাভানা, ব্রাজিলিয়ান পাও পাও ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর মধ্যে থাকা আনোনাসিয়াস এসেটোজেনিন নামক এক ধরনের যৌগ রয়েছে যা ক্যানসার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি ক্যানসার কোষে শক্তি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ আটকে দেয়।
করোসল ফলের গাছটি ২৫-৩০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এবং স্বল্প শাখা-প্রশাখাযুক্ত হয়ে থাকে। এই ফলটি আতা ফলের মতো খাওয়া ছাড়াও পানীয় এবং শরবত হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
করোসল ফলের জন্যে ৫-৬.৫ মাত্রার মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটিতে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। বেলে মাটি এই ফলের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কাঁঠালের মত কাঁটা যুক্ত সবুজ রঙের করোসল ফল। করোসল গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ রঙের ফুল ধরে। ফুল ফোঁটার পর লাভ আকৃতির তিনটি খোসা ফেটে গিয়ে ভেতর থেকে করোসল ফল বের হয়। ছোট ছোট করোসল ফলের পাশাপাশি বড় ফলও গাছে দেখা যায়। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ৪শ গ্রাম থেকে এক কেজি। করোসল ফল এবং গাছের পাতা পানিতে চুবিয়ে খাওয়ার পর ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ভালো হয়ে যায়।
এর গাছের পাতাও অনেক উপকারি। ভেষজ করোসল ঔষধি গাছটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। করোসল ফল ক্যানসার, কিডনি, হার্ট লিভার পরিষ্কার এর জন্য বিশেষ উপকারী। আমেরিকাতে এই গাছের পাতা ও ফল ভাল দামে বিক্রি করা হয়। ফল ও পাতা খেলে ক্যানসারের মতো কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। করোসল চাষ করলে ক্যান্সার রোগীদের ক্যামোথেরাপির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে না।