Seven Days Bangla

ঢাকা রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে লিভার ক্যানসার নির্ণয়

লিভার ক্যান্সার আছে কি না? জানুন খুব সহজে

লিভার ক্যান্সার আছে কি না? জানুন খুব সহজে

সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রাথমিক পর্যায়ের লিভার ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স, আইসিডিডিআরবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর সম্মিলিত একটি গবেষণা।

রোববার (২৩ জুলাই) রাজধানীর হোটেল হলিডে ইনে আয়োজিত ‘সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনার থেকে এ কথা জানানো হয়।

 

সেমিনারটি বিখ্যাত পিয়ার রিভিউড আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত নিবন্ধের ভিত্তিতে আয়োজন করা হয়। এই পরীক্ষা সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে লিভার ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম বলে জানানো হয়।

সেমিনার থেকে জানানো হয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকিতে আছে এমন ব্যক্তিদের (যেমন লিভারের রোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারী) লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ফলশ্রুতিতে এই ধরনের ক্যানসারের সাথে সম্পর্কযুক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।

এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স লি., আইসিডিডিআরবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা  গবেষণাটি সম্মিলিতভাবে করেছেন।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এইচকেজি এপিথেরাপিউটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং কানাডার রয়্যাল সোসাইটির ফেলো প্রফেসর মোশে জিফ। এ সময় হেপাটাইটিস এবং লিভার ক্যানসার সম্পর্কিত বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বিএসএমএমইউর ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, লিভার ক্যানসারের ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। ফলে এই রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, যা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। উদ্ভাবিত এই পরীক্ষা আধুনিক সিকোয়েন্সিং ও মাল্টিপ্লেক্সিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সাধারণ টিস্যু, রক্তের অন্যান্য নমুনা ও নন-লিভার ক্যানসার টিউমার থেকে লিভার ক্যানসার নমুনাকে আলাদা করে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে।

৫৫৪ জন অংশগ্রহণকারীকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষাটির মূল্যায়ন করেছেন গবেষকরা। এর মধ্যে ছিল লিভার ক্যানসার রোগী, নন-লিভার ক্যানসার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে পরীক্ষাটিতে লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ৮৪.৫% সেন্সিটিভিটি ও ৯৫% স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে। এই গবেষণা ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার রোগের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে। (এটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ-এর ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের আওতাভুক্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রেজিস্ট্রিতে নিবন্ধিত হয়েছে)।

বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকের সেমিনারটি লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য একটি মাইলফলক এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনন্য অগ্রগতিকে তুলে ধরেছে। আমরা সবাই এখানে লিভার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একত্রিত হয়েছি। বিশেষ ডিএনএ চিহ্নিতকারীর ওপর ভিত্তি করে এই নতুন পরীক্ষা ঝুঁকিতে আছে এমন মানুষদের সাহায্য করার পাশাপাশি ক্যানসারের প্রভাব কমিয়ে আনবে বলে আমি আশা করছি।

প্রফেসর মোশে জিফ বলেন, উন্নত এই পরীক্ষাটি ক্যানসার শনাক্তকরণে একটি নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করেছে। এটি ক্যানসার রোগ নির্ণয় এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাসহ প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, যদিও আরো গবেষণা প্রয়োজন, তবুও লিভার ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের এই অগ্রগতি একটি বিরাট পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেই সঙ্গে এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর রোগের প্রভাবকে অনেকাংশে কমিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও এই গবেষণা দলের প্রধান গবেষক এবং সমন্বয়ক ডা. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, এই যুগান্তকারী অগ্রগতি লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটির সম্ভাবনা অসাধারণ। এর মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়সহ বাংলাদেশের মানুষের  স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের দলের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। লিভার ক্যানসারের ব্যাপকতা কমাতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশে এই পরীক্ষা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।