গরুর কলিজা ভুনা
আমরা অনেকেই মাংসের চেয়ে কলিজা ভুনা খেতে বেশি পছন্দ করি। কলিজায় নানা পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এটি আমাদের শরীরের জন্যও বেশ উপকারী। রান্না করার বিভিন্ন কৌশল না জানার কারণে অনেকে কলিজা রান্না করলেও এক ধরনের গন্ধ থেকে যায়, স্বাদও ভালো হয় না।
সুস্বাদু এই খাবার খাওয়া যায় রুটি কিংবা পরোটার সঙ্গেও। জেনে নিন সহজেই কলিজা ভুনা তৈরির রেসিপি:
কলিজা ভুনা তৈরিতে যা লাগবে
* গরুর কলিজা- ১ কেজি * সয়াবিন তেল- আধা কাপ * জিরা- আধা চা চামচ * দারুচিনি- কয়েক টুকরো * এলাচ- ৩টি * লবঙ্গ- ৭টি * তেজপাতা- ২টি * পেঁয়াজ কুচি- ২ কাপ * কালো এলাচ- ১টি * মেথি দানা- ১/৪ চা চামচ * আদা বাটা- দেড় টেবিল চামচ * রসুন বাটা- দেড় টেবিল চামচ * হলুদ গুঁড়া- আধা চা চামচ * ধনিয়ার গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ * মরিচের গুঁড়া- স্বাদ মতো * রসুন- ৬ কোয়া * লবণ- স্বাদ মতো * আস্ত কাঁচা মরিচ- কয়েকটি * ভাজা জিরার গুঁড়া- ১ চা চামচ
যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে বড় টুকরা করে কেটে নিন কলিজা। গরম পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল করুন। এতে কলিজার ভেতরে থাকা ময়লা বেরিয়ে আসবে। বারকয়েক ভালো করে ধুয়ে কলিজার উপরের পাতলা আবরণটি উঠিয়ে নিন। এতে রান্নার পর কলিজা শক্ত হবে না। এবার ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন কলিজা।
এরপর প্যানে তেল গরম করে জিরা ও গরম মসলা দিয়ে ফোঁড়ন দিন। ২ মিনিট জ্বাল করার পর দেড় কাপ পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ নরম করে ভেজে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিন। সামান্য পানি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে কলিজার টুকরা দিয়ে দিন। রসুনের কোয়া ও স্বাদ মতো লবণ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। ৬ থেকে ৭ মিনিট নেড়েচেড়ে রান্না করুন। আধা কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন কলিজা।
সেদ্ধ হয়ে আসলে ভাজা জিরার গুঁড়া, আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি ও আস্ত কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। কম আঁচে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন প্যান। এরই মধ্যে তেল ভেসে উঠবে। ব্যাস, চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম ভাত, খিচুড়ি কিংবা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন কলিজা ভুনা।
কেন খাবো গরুর কলিজা?
১। রক্ত মানব শরীরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রক্তহীন কোনও মানুষ বাঁচতে পারে না। আর এই রক্ত তৈরির প্রধান উপাদান হচ্ছে আয়রন। এই আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে গরু, ছাগল বা ভেড়ার কলিজায়। রক্তের প্রধান উপাদানের নাম লোহিত রক্ত কণিকা (আরবিসি)। এই কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি ও পুষ্ট করার জন্য আয়রনের গুরুত্ব অপরিহার্য। আর শরীরের আয়রন বৃদ্ধিতে কলিজা খাওয়া বিশেষ উপকারী।
২। বড় কোনও অপারেশনের পর, প্রচুর রক্তক্ষরণের পর, গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মদান বা মাতৃদুগ্ধ দানকালীন সময়ে কলিজা খাওয়া যথেষ্ট উপকারী। তবে হৃৎপিণ্ডের বাইপাস সার্জারি বা রিং পরানো, উচ্চ রক্তচাপ জনিত রক্তক্ষরণের পরে কলিজা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, এতে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৩। কলিজায় ভিটামিন ‘এ’এবং আমিষ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এই উপাদানগুলো দেহের বর্ধনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
৪। কলিজায় আরও রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি-সিক্স। কলিজার ভিটামিন ‘এ’ শীতকালীন ঠাণ্ডা-কাশির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে । আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরার ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। কলিজার কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের উপকরণ এই শিরা- উপশিরার দেয়ালকে প্রসারিত করে । ফলে রক্ত প্রবাহ সহজ হয়।
৫। সেলেনিয়াম নামের আরও একটি জরুরি উপাদান আছে এই কলিজায়। সেলেনিয়াম হ্রাস করে ক্লোন ক্যানসারের পরিমাণ। এছাড়াও সেলেনিয়াম শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ইনফেকশন, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা, কৃমির পরিমাণকে কমিয়ে দেয়।
৬। আমাদের শরীরে ঠাণ্ডা জনিত জ্বর, টনসিলাইটিস, সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাস নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে জিংক। কলিজায় রয়েছে মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে জিংক। তাই শরীরের জিংকের চাহিদা মেটানোর জন্য কলিজা খাওয়া খুবই জরুরী।