সফল উদ্যোক্তা কক্সবাজারের নাজমা
কক্সবাজারের উদ্যোক্তা কলেজ শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার রেশমি তৈরি করছেন কাঁটাবিহীন এবং দুর্গন্ধমুক্ত ‘শুঁটকি গুঁড়া’। করোনার সময় উদ্যোগ নিলেও মাত্র দুই বছরের মধ্যে তার তৈরি শুঁটকি গুঁড়ার কদর বেড়েছে সারাদেশে। অনলাইনে এই শুঁটকি গুড়া বিক্রি করায় গ্রাহকের পাশাপাশি বাড়ছে তার আয়ও।
শুঁটকির নাম শুনলে খুশি হওয়া ভোক্তার চেয়ে দুর্গন্ধের কারণে নাক সিটকানো মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে, মাছ শুকানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু নাজমার তৈরি এই শুঁটকি গুঁড়া কাঁটাবিহীন এবং দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ায় অল্প দিনেই স্থানীয়দের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলীর আদর্শ গ্রামে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমার তিন কক্ষের দোকান ‘পালংকি কন্যা’। দোকানের নামে রয়েছে আলাদা ফেসবুক পেজও। অধিকাংশ সময় দোকানে বসেই চলে তার ব্যবসায়ীক কার্যক্রম। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভেতরের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে শুঁটকি গুঁড়া করার মেশিনসহ নানা যন্ত্রপাতি।
নাজমা আক্তার রেশমি জানান, শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে তার পণ্য ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এখন দোকানসহ অনলাইনে তার গ্রাহক সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। মাসে গড়ে বিক্রি হয় ৩ লাখ টাকার পণ্য। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাভ থাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
নাজমা আক্তার বলেন, শুঁটকি গুঁড়া তৈরির পর বিভিন্ন ল্যাব টেস্ট করিয়ে দেখি এই খাবারে প্রোটিনের হার আসলেই বেশি। সেই সঙ্গে মিনারেল, ক্যালসিয়ামও আছে। যেহেতু আমরা কাঁটাসহ গুঁড়া করি তাই এখানে অনেক ধরনের ভিটামিন থাকে।
কলাতলী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, নাজমার এই উদ্যোগ কক্সবাজারকে শুঁটকি দিয়ে সবার মাঝে পরিচিত করবে। একদিকে যেমন কক্সবাজারের পরিচিতি বাড়ছে অন্যদিকে বেকারত্বও দূর হচ্ছে।
কক্সবাজার ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম এ মঞ্জুর বলেন, বর্তমানে শিক্ষিতরাই বেশি বেকার হয়ে যাচ্ছেন। তাই উদ্যোক্তা হলে এই বেকার নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যদি আমাদের নাজমার মতো উদ্যোক্তা হয় তাহলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান করতে পারবে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করেই সকলের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আমার ওয়ার্ডে নাজমা এই উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে সবাই এখন আগ্রহ প্রকাশ করছেন। নাজমা দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বেকারত্ব দূর করতে হয়।
মাছের খাদ্য হিসেবে শুঁটকি গুঁড়া পাওয়া গেলেও মানুষের জন্য এটি বাজারে নতুন। এ ধরনের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা সকল শুঁটকি উৎপাদনকারীকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসব। এরপর তারা যখন শুঁটকি তৈরি করবে সেই সময় প্রত্যেক লট থেকে নমুনা নিয়ে আমরা অর্গানোক্লোরিন এবং অর্গানো ফসফরাসের কীটনাশকের পরীক্ষা সম্পন্ন করব। এটি ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।
এদিকে, দেশে-বিদেশে ভালো চাহিদা থাকায় নাজমার মতো উদ্যোক্তাদের তৈরি শুঁটকি গুঁড়া রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, অর্গানিক শুঁটকি যাতে মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে পারি সেজন্য কিছু কারিগরি সহযোগিতাও দরকার। বিশেষ করে ড্রাইয়ার, কোল্ড স্টোরেজসহ অন্যান্য উপকরণ যাতে শুল্কমুক্ত আমদানি করা যায়, সেই সুবিধা যাতে আগামী বাজেটে থাকে সেটা আমাদের প্রস্তাব থাকবে।
বর্তমানে সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হয় শুঁটকি গুঁড়া। প্রতি কেজি শুঁটকি গুঁড়া বিক্রি হয় এক হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে। ভবিষ্যতে শুঁটকি গুঁড়া দিয়ে বিস্কুট, চিপসসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাজমা আক্তার রেশমি।